EK 584
প্লেনে বসে আছি। আমার গন্তব্য দুবাই সেখানে ১২ ঘণ্টা কিভাবে কাটাবো তা নিয়ে কিঞ্চিত চিন্তিত । যদি ঘুমিয়ে পড়ি প্লেন যদি আমাকে রেখে নিউ ইয়র্ক চলে যায় তখন কি হবে ? এসব আকাশ পাতাল ভাবনায় আছি তখন এয়ার হোস্টেস খাবার নিয়ে এলো। সামনের ট্রে খুলে দিলাম। আমার পাশে বসা দুই যাত্রী এয়ার হোস্টেসকে ইশারা ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিল তারা খাবে না। আমি যখন খাচ্ছি তারা যথেষ্ট আগ্রহ নিয়ে আমার খাওয়া দেখছে ! কি যন্ত্রণা। কিছু বলতেও পারছি না। যাত্রীদের দুজনেরই কমলা রঙের ওভারল পরা ,মাথায় তেল জবজব করছে। আমি খাওয়া দাওয়া শেষ করে ঘুমিয়ে পরলাম। ঘণ্টা তিনেক ঘুমানোর পর জেগে উঠেছি প্লেন আরও ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই দুবাইতে ল্যান্ড করবে। প্রচণ্ড কফির তেষ্টা পেয়েছে। সিট থেকে উঠে গিয়ে নিজের জন্য এককাপ কফি নিয়ে এলাম। এয়ার হোস্টেস মহিলা চমৎকার এক মানবী তিনি আমাকে দুটো আপেল আর কিছু বিস্কিট দিলেন কফির সাথে। আমি আপেল খাই না খেলেই গলা চুলকায় কিন্তু মহিলা যেহেতু খাতির করে দিয়েছেন ,না বলতে পারলাম না। আমি আপেল দুটো সিটের সামনের পকেটে রেখে দিলাম। কফি খাচ্ছি (পান করছি হা হা ) আমার পাশের যাত্রী এই প্রথম মুখ খুললেন ভাইজান , আপনে যে এই খাবার আনলেন কত নিলো ?এবার আমার অবাক হবার পালা। আমি বললাম কত নিলো মানে ? এগুলো তো ফ্রি। যাত্রীর পরবর্তী প্রশ্ন আগে যে খাবার খেলেন ঐটাও ফিরি ? আমি বললাম হ্যাঁ। আমি বললাম আপনারা খাবার খেলেন না কেন? তার উত্তর, আমরা তো খালি প্লেনের টিকেটের পয়সা দিছি খাওনের পয়সা তো দেই নাই তাছাড়া বরিশাল থাইকা যখনি ঢাকায় ইস্টিমারে গেছি তহনতো খাওন দাওন কিন্না খাইতাম না বাড়িত থাইকা চিড়া ,মুড়ি গুর নিয়া আসতাম তবে টেরেনে দেখছি ক্যান্টিনের লোকজন খাবার নিয়া হাঁটে পয়সা দিলে খাওন কিন্যা খাওয়া যায়। আমার মনটা বেশ খারাপ হলো হয়তবা গতরাতে মানুষগুলো খাবার খেয়ে স্টিমারে চেপেছে খিদেয় হয়ত তার পেট চো চো করছে আমি এয়ার হোস্টেসকে ডেকে তাদের খাবারের ব্যবস্তা করলাম। এ মানুষগুলোই মরুভূমির তীব্র রোদ উপেক্ষা করে ডলার ,রিয়াল ইত্যাদি পাঠিয়ে আমাদের দেশের অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রাখে ।সচল রাখে একটি অচল দেশকে !